মার্কিন ফ্যাসিবাদকে এক বলিষ্ট না! ট্রাম্পকে গদিচ্যূত করতে গণআন্দোলন গড়ে তুলুন!
১৪ অক্টোবর ২০১৯
সন্দেহের ওপর ভিত্তি করে যে তদন্ত কংগ্রেস শুরু করেছিল তার পরিপ্রেক্ষিতে রাষ্ট্রপতি ডোনাল্ড ট্রাম্পের প্রতিক্রিয়া প্রকাশ্যেই সম্পূর্ণ ফ্যাসিবাদী চরিত্রের। গত সপ্তাহে মিনিয়াপোলিস, মিনেসোটা ও লেক চার্লসে ট্রাম্প প্রকাশ্যে বিদেশীদের প্রতি আতঙ্ক, জাতিগত বিদ্বেষ এবং ইহুদি-বিদ্বষের স্বপক্ষে কথা বলেছে। তিনি নিজের রাজনৈতিক প্রতিপক্ষদের "অতি-বাম", "সমাজতান্ত্রিক" রাজনীতিবিদ ও "আমেরিকা বিদ্বেষী" বলে অভিহিত করেন এবং দর্শকাসনে যে পুলিশ ও অন্যান্য যে দক্ষিণপন্থী শক্তিরা ছিল, তাদের নিজের রাজনৈতিক প্রতিপক্ষের বিরুদ্ধে উস্কানি দেন।
ট্রাম্প যে ভাবে রাষ্ট্রপতির ক্ষমতা ব্যবহার করে একনায়কতান্তিক শাসন কায়েম করতে চাইছে, তার নজির মার্কিন ইতিহাসে নেই। সকল সাংবিধানিক সংযমের প্রতি ট্রাম্পের ঘৃণা রয়েছে। তাই তিনি পরিষ্কার করে দিচ্ছেন যে ক্ষমতায় টিকে থাকার জন্য তিনি অপরাধ ও হিংসাত্মক পন্থা অবলম্বন করতে প্রস্তুত। মিনিয়াপোলিসে তার বক্তব্যে তিনি চিৎকার করে বলেন যে তিনি "আরও ১৬ বছর" ক্ষমতায় থাকতে চায়, মার্কিন সংবিধানকে ধ্বংস না করে যা সম্ভব নয়। ব্যক্তিগত একনায়কতন্ত্রের বিষয়ে তার অবৈধ দাবির বিষয়ে তিনি কিছুই লোকাননি এবং ঘোষণা করেন যে তাকে সরানোর যে কোনো প্রচেষ্টার ফলই হবে "গৃহযুদ্ধ"। ট্রাম্পের বলেন যে তার রাজনৈতিক প্রতিপক্ষরা "রাজদ্রোহে" দোষী এবং তার এই বক্তব্য গ্রেপ্তারের ও খুনে নির্বাসনের রক্তচক্ষুর ভয় নিয়ে আসছে।
বৃহস্পতিবার তার বৃক্তৃতার একটি অশুভ পরিচ্ছসে সিরিয়া থেকে সৈন্যবাহিনী ফেরত আনার তার সিদ্ধান্তকে ট্রাম্প সমর্থন করে ঘোষণা করেন, "আমরা সৈন্যদের ঘরে ফিরিয়ে আনছি। তাদেরকে আমাদের অন্য কোনো কাজে প্রয়োজন পড়তে পারে, এবং তারা প্রস্তুত থাকবে"। স্বৈরাচারী শক্তির প্রসঙ্গে তার বক্তব্যে, এই "অন্য কিছু" দিয়ে ট্রাম্প পরিষ্কার ভাবেই মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে ঘরোয়া প্রতিপক্ষের বিরুদ্ধে সামরিক বাহিনীকে ব্যবহার করার হুমকি দিয়েছে। হোয়াইট হাউস ইতিমধ্যেই এটি শুরু করেছে মার্কিন-মেক্সিকো সীমানায় উদ্বাস্তুদের ওপর নৃশংস আক্রমণও শানানোর মধ্য দিয়ে সামরিক বাহিনীকে পরিচালিত করে।
ট্রাম্পের রাষ্ট্রপতিত্ব দ্রুত ফ্যাসিবাদী চরিত্র বিশিষ্ট একটি দক্ষিণপন্থী স্বৈরাচারী শাসনে পরিণত হচ্ছে - এই বিষয়টিকে অস্বীকার করলে, এমনকি কম করে বললেও, রাজনৈতিক সত্যের দিকে অন্ধ হয়ে থাকা হবে। সেই পুরনো ভাবনা - "এখানে এমন হতে পারে না" - অর্থাৎ মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের গণতন্ত্রে ফ্যাসিবাদের মারণরোগ আসতে পারে না - তা নিরাশাজনক ভাবে সেকেলে। ট্রাম্পের মতন একজন দুর্বৃত্ত যে হোয়াইট হাউসে ক্ষমতায় আসতে পেরেছে, সেটাই বর্তমান রাজনৈতিক ব্যবস্থার চরম সংকটের প্রমাণ।
মার্কিন পুঁজিবাদের অর্থনৈতিক ও সামাজিক অসঙ্গতি, যা গভীর ভাবে শিকড় গেড়েছে, তারই ফসল এই ট্রাম্প প্রশাসন। ধনীতম ১ শতাংশ জনগণের কাছে বিপুল সম্পদ জমা হয়েছে এবং যে অস্বাভাবিক সামাজিক অসাম্য রয়েছে, তা গণতান্ত্রিক শাসনব্যবস্থার প্রথাগত ধরণের সঙ্গে সম্পূর্ণ বেমানান। গত চার দশক ধরে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ক্রমাগত এক অভিজাত সমাজে পরিণত হয়েছে। তারা অধিকাংশ জনগণের থেকে বিচ্ছিন্ন থাকে এবং তারা গণতন্ত্রের জন্য বিপজ্জনক। মানুষের বেঁচে থাকার অবস্থার উন্নতি করার প্রতিটি দাবিতেই তারা মনে করে তাদের নিজেদের সম্পত্তি কমে যাবে।
ট্রাম্প নিউ ইয়র্কের অপরাধী জগতের ফসল। সে প্রয়োজনীয় অভদ্রতা ও অশ্লীলতার সাথেই অভিজাত শ্রেণীর স্বৈরাচারী আবেগকে ভাষা প্রদান করে। সে যা ভাবে সমাজতন্ত্র ও কমিউনিজমের বিরুদ্ধে কথা বলে, তা ধনীদের বেড়ে চলা সেই ভয়কেই ভাষা প্রদান করে, যে ভয়ের থেকে তারা মনে করে সামাজিক সংস্কার হলে সম্পদ বন্টনের বিপুল পুণর্বিন্যাস হবে, যার ফলে পুঁজিবাদী সম্পত্তি বাজেয়াপ্ত হবে।
ট্রাম্প প্রশাসন ভিত্তিগত ভাবেই গণতন্ত্রকে অবজ্ঞা করে। প্রথম থেকেই তার রাষ্ট্রপতিত্ব বেআইনি। জনগণের ভোটের নিরিখে প্রায় ৩০ লক্ষ ভোটে পরাজিত হলেও, নির্বাচনী মহাবিদ্যালয়ের গণতন্ত্র বিরোধী পন্থার মধ্যে দিয়ে ট্রাম্প নির্বাচিত হয়েছিল। তার প্রশাসনের সংখ্যালঘুত্বকে স্বীকার করা দূরে থাক, ট্রাম্প এমন ভাব দেখান যেন বিপুল ভোটে জিতে তিনি রাষ্ট্রপতি হয়েছেন। কিন্তু তিনি নিজেও ভালোই জানেন যে তার ছদ্ম জনদরদী নেতৃত্ব সত্ত্বেও তার নীতিগুলি প্রবল বিরোধীতার জন্ম দেয়।
পুলিশ, সিকিউরিটি ও সামরিক দর্শকের সামনে ট্রাম্পের আবির্ভাব এবং রাজনৈতিক ভাবে বিচ্ছিন্ন ও পিছিয়ে পড়া মানুষদের কাছে টানতে সাবধানে রূপায়িত ট্রাম্পের জনসভাগুলি - এ সবই খুব হিসাব করা রাজনৈতিক চাল, যার ওপর সে তার স্বৈরাচারী শাসনের ভিত্তি স্থাপন করে মার্কিন সংবিধানের ঐতিহ্যগত যে আইনগত সীমানা আছে, তার বাইরে যেতে পারে।
মার্কিন গণতন্ত্র এখন এক ঐতিহাসিক মোড়ে এসে দাঁড়িয়েছে। ক্ষমতা রাখার জন্য ট্রাম্পের রাষ্ট্রপতিত্ব ক্রমাবর্দ্ধমান বেআইনি, স্বৈরাচারী ও হিংস্র চরিত্র ধারণ করবে। এই প্রশাসনকে ক্ষমতাচ্যূত করা এখন রাজনৈতিক ভাবে একান্ত প্রয়োজন। কিন্তু কারা কোন্ পন্থায় এই লক্ষ্যপূরণ করবে, তা জীবনমরণের প্রশ্ন। এতদিন পর্যন্ত ট্রাম্পের বিরোধীতায় প্রধান ভূমিকা থাকত ডেমোক্র্যাটিক পার্টির। সন্দেহের জন্য এই যে তদন্ত হচ্ছে, তা শাসক শ্রেণীর মধ্যে ক্রমাগত বেড়ে চলা দলীয় দ্বন্দ্বের ফল।
গোয়েন্দা সংস্থাগুলি, সামরিক বাহিনী এবং কর্পোরেট ও আর্থিক অভিজাতদের মধ্যে যারা অসন্তুষ্ট তাদের অপর ভিত্তি করে ডেমোক্র্যাটিক পার্টি সরকার বদলের চেষ্টা চালাচ্ছে।
রাষ্ট্রযন্ত্রের ভিতরে ট্রাম্পের বিরোধীরা বিশ্বে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ক্ষমতা কমে আসার দীর্ঘমেয়াদি প্রভাব সম্বন্ধে অত্যন্ত সচেতন। তারা ট্রাম্পের বিদেশ নীতিকে, বিশেষত রাশিয়া ও সিরিয়ার বিষয়ে, ট্রাম্পের বিদেশনীতিকে অনিশ্চিত ও অপ্রত্যাশিত বলে মনে করে। তারা মনে করে মার্কিন সাম্রাজ্যবাদের গুরুত্বপূর্ণ ভূতাত্ত্বিক শর্তের বিরুদ্ধাচারণ করে ট্রাম্পের বিদেশনীতি। এই কারণেই তারা বিদেশনীতির বিষয়ে বিরোধীতাকে একত্রিত করেছে, প্রথমে রুশ বিরোধী প্রচারের মাধ্যমে এবং এখন ইউক্রেনের রাষ্ট্রপতির সঙ্গে ট্রাম্পের টেলিফোনে কথা হয়েছে, এই ভিত্তিতে।
রাষ্ট্রের মধ্যে যে সামাজিক ও রাজনৈতিক স্বার্থ ট্রাম্পের বিরোধীতাকে প্রেরণা জোগায়, তা-ই পন্থা ঠিক করে দেয়। এই সন্দেহের প্রতিক্রিয়া হিসাবে ট্রাম্প চেষ্টা করছে একটি দক্ষিণপন্থী আন্দোলন শুরু করতে, অন্যদিকে ট্রাম্পের বিরুদ্ধে জনরোষ বাড়িয়ে তুলতে পারে, এমন সব কিছুকে এড়াতে ডেমোক্র্যাটরা বদ্ধপরিকর। সেদিক থেকে দেখতে গেলে, তার প্রতিদ্বন্দ্বীদের চেয়ে ট্রাম্প অনেক বেশী রাজনৈতিক প্রজ্ঞা প্রদর্শন করে। তার বিরোধীরা সবসময় তাদের পিছনে ঘুরে দেখছে, এমন সব কিছুতে ভয় পাচ্ছে যা মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে বিস্ফোরক সামাজিক দ্বন্দ্বকে জ্বালিয়ে তুলবে।
এই জন্য সন্দেহের বশে এই তদন্ত করা হচ্ছে পর্দার আড়ালে এবং তা কেবলই সাম্প্রদায়িক বিদেশ নীতির মধ্যেকার দ্বন্দ্বের মধ্যে সীমাবদ্ধ। এই বিষয়টিই ট্রাম্প প্রশাসনের প্রতি ডেমোক্র্যাটদের কপট চরিত্রের কারণ পরিষ্কার করে দেয়। "জাতীয় নিরাপত্তা"র জন্য এবং রাষ্ট্রপতি পুতিন সরকারের প্রতিনিধি হিসাবে কাজ করছে, এই কারণে ডেমোক্র্যাটরা প্রকাশ্যে ট্রাম্পের নিন্দা করেছে, অথচ জরুরি ঘরোয়া নীতির বিষয়ে ট্রাম্পের সঙ্গে হাত মেলানোর চেষ্টা করেছে।
তাদের মতবিরোধ যতই তীব্র হোক, শাসক শ্রেণীর সব দলই সামাজিক কার্য্যক্রম ধ্বংস, মজুরি ও সুবিধার ওপর আক্রমণ করা, উদ্বাস্তুদের ওপর আক্রমণ, গণতান্ত্রিক অধিকার ধ্বংস করা এবং বিপুল সামরিক বাহিনী তৈরী করার বিষয়ে এরা সকলেই একমত। এই দ্বন্দ্বের মধ্যেই সামরিক ব্যায়ে ট্রাম্পের সর্বোচ্চ বাজেট ডেমোক্র্যাটরা পাশ করে দিয়েছে এবং ধনীদের জন্য কর ছাড়ের রাস্তা মসৃণ করে দিয়েছে।
যতক্ষণ এই দ্বন্দ্ব শাসক শ্রেণীর মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকছে, এর কোনো গণতান্ত্রিক বা প্রগতিশীল ফল পাওয়া যাবে না। যদি ডেমোক্র্যাটদের এই অভিযোগ ব্যর্থ হয়, তবে তা ট্রাম্পের রাজনৈতিক অবস্থানকে আরও সুদৃঢ় করবে। যদি এটি সফল হয়, তবে ট্রাম্পের মতনই আরেকজন, মাইক পেন্সকে রাষ্ট্রপতি হবার দিকে এগিয়ে দেবে। এছাড়াও, এই অভিযোগ আসলে হোয়াইট হাউসের ওপর সি-আই-এ এবং এফ-বি-আই-এর রাজনৈতিক প্রভাবকে আরও শক্তিশালী করবে। এটি রাশিয়া-বিরোধী হিস্টিরিয়ার ওপর ভিত্তি করে বানানো বিদেশনীতিকে বৈধতা দেবে, যা এক পারমাণবিক শক্তিধর রাষ্ট্রের সঙ্গে এক ভয়াবহ দ্বন্দ্বকেও ন্যায্যতা প্রদান করবে। ফল যা-ই হোক, তা শ্রমিক শ্রেণীর জন্য ভয়াবহই হবে।
প্রাক্তন উপরাষ্ট্রপতি জো বিডেন এবং ট্রাম্পের ইউক্রেনে ফোন করা নিয়ে ডেমোক্র্যাটিক পার্টি ও মিডিয়া যে ডুবে আছে, তা কেবলই দৃষ্টি ঘোরানোর চেষ্টা। ট্রাম্পকে গদিচ্যূত করার জন্য এক গণ আন্দোলন শুরু করার জন্য প্রয়োজন তার আসল অপরাধগুলিকে চিহ্নিত করা। তাছাড়াও, গণতান্ত্রিক অধিকার রক্ষাকে পরিষ্কার ভাবে যুক্ত করতে হবে শ্রমিক শ্রেণীর সামাজিক স্বার্থ লাভ করার লড়াইয়ের সঙ্গে, যা জনসংখ্যার অধিকাংশের সঙ্গে আপোষ করে।
এই কারণগুলির জন্য ট্রাম্পকে গদিচ্যূত করা প্রয়োজন:
- একটি অসাংবিধানিক ও বেআইনি একনায়কতন্ত্র তৈরী করতে ট্রাম্প রাষ্ট্রপতির পদের ক্ষমতা ব্যবহার করছে।
- সীমানা বরাবর দেওয়াল তোলা ও দেশের আভ্যন্তরীণ নীতির জন্য ট্রাম্প সামরিক বাহিনীকে ব্যবহার করছে।
- সাংবিধানিক নীতি অনুযায়ি যতদিন ক্ষমতায় থাকা যায়, ট্রাম্প তার চেয়ে বেশীদিন ক্ষমতায় থাকবে বলে হুমকি দিচ্ছেন এবং ইঙ্গিত দিয়েছেন যে তার যেখানে পরাজয় হবে, এমন কোনো বৈধ নির্বাচনও তিনি গ্রহণ করবেন না।
- ট্রাম্প তার রাজনৈতিক বিরোধীদের ওপর হিংসাত্মক আক্রমণ করার প্ররোচনা দিচ্ছেন এবং সেই সব ফ্যাসিবাদী জনগণকে রাজনৈতিক ভাবে উৎসাহ প্রদান করছে যারা উদ্বাস্তুদের ও ইহুদিদের গণহত্যা পরিচালনা করেছে।
- ট্রাম্প অভিবাসীদের ও উদ্বাস্তুদের যন্ত্রণা দিচ্ছেন এবং মার্কিন-মেক্সিকো সীমানায় তাদের জন্য কনসেন্ট্রেশন ক্যাম্প নির্মান করাচ্ছেন।
- যে পুলিশ প্রতি বছর ১০০০ মার্কিন জনসাধারণের মৃত্যুর জন্য দায়ী থাকে, ট্রাম্প সেই পুলিশদের হিংস্র কাজ করতে উৎসাহ যোগাচ্ছে।
- যে সমস্ত দেশ মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের কথা শুনছে না, আন্তর্জাতিক ও জাতীয় আইন লঙ্ঘন করে ট্রাম্প তাদের ধ্বংস করার হুমকি দিচ্ছে।
- সাংবিধানিক ভাবে যে বাক্স্বাধীনতা রক্ষা করার কথা বলা হয়েছে, তাকে লঙ্ঘন করে ট্রাম্প পুঁজিবাদের বিরোধীতাকে দেশদ্রোহের সঙ্গে এক করে দিচ্ছেন।
ট্রাম্প শাসনের বিরুদ্ধে এবং মৌলিক গণতান্ত্রিক অধিকার রক্ষার জন্য যে লড়াই, তা পুঁজিবাদ ও মার্কিন সাম্রাজ্যবাদ বিরোধী সংগ্রাম, যা ডেমোক্র্যাটিক পার্টির থেকে সম্পূর্ণ স্বাধীন ভাবে এবং তাদেরও বিরুদ্ধে করতে হবে।
বিশ্বব্যাপী এক সঙ্কটের কেন্দ্রস্থলে রয়েছে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র। শাসনের গণতান্ত্রিক আকার সর্বত্র ভেঙে পড়ছে। জার্মানিতে তৃতীয় রিখের পতনের ৭৫ বছর পর জার্মানিতে ফ্যাসিবাদ আবার একটি ভয়াবহ রাজনৈতিক শক্তি। ফ্রান্সে বেড়ে চলা সামাজিক অস্থিরতার বিরুদ্ধে ইমানুয়েল ম্যাক্রনের সরকার ফরমান জারি করেছে। ফ্যাসিবাদী বরিস জনসন ব্রিটেন শাসন করছে। ব্রাজিলে ও ভারতে অতি-দক্ষিণ ও চূড়ান্ত জাতীয়তাবাদী সরকাররা ক্ষমতায় আছে।
চূড়ান্ত অসাম্য ও ক্রমাগত যুদ্ধের ওপর ভিত্তি করে দাঁড়িয়ে থাকা সমাজ ব্যবস্থা ও গণতান্ত্রিক অধিকারের সহাবস্থান সম্ভব নয়। ১৯৩০-এর শিক্ষা হলো যে কেবল মাত্র পুঁজিবাদ-বিরোধী ও সম্পূর্ণ সমাজতান্ত্রিক কার্য্যক্রমের মধ্যে দিয়েই ফ্যাসিবাদ ও স্বেচ্ছাচারের বিরুদ্ধে লড়াই সম্ভব।
এই সংগ্রামে যে পদ্ধতি ব্যবহৃত হবে, তা শ্রেণী সংগ্রামের পদ্ধতি এবং এর লক্ষ্য হবে শ্রমিকদের সরকার গঠন করা। এই শ্রমিকদের সরকার আমূল পদ্ধতিতে সম্পদ পুণর্বন্টন করবে, বড় বড় কর্পোরেশন ও ব্যাঙ্কগুলিকে শ্রমিকদের গণতান্ত্রিক নিয়ন্ত্রণে আনবে, এবং এক পরিকল্পিত অর্থনীতি চালু করবে যা ব্যাক্তিগত লাভের ভিত্তিতে হবে না, হবে সামাজিক প্রয়োজনের ভিত্তিতে।
দু'বছরেরও আগে, তাদের বিবৃতি “Palace Coup or Class Struggle: The political crisis in Washington and the strategy of the working class-এ ডাব্লু-এস-ডাব্লু-এস লিখেছিলঃ
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে গণ সংগ্রাম আলোচ্য বিষয়ের মধ্যে রয়েছে। প্রতিবাদ মিছিল, বিক্ষোভ ও ধর্মঘট ক্রমে দেশ জুড়ে ছড়িয়ে পড়বে। এই বিশ্লেষণ থেকে যে রাজনৈতিক উপসংহার পাওয়া যায় তা হলো এই যে ট্রাম্প এবং সে যা যা প্রতিনিধিত্ব করে, তার বিরুদ্ধে শ্রমিক শ্রেণীর সংগ্রাম পুঁজিবাদী ব্যবস্থা এবং তার রাষ্ট্রের বিরুদ্ধে আরও একটি রাজনৈতিক গণ সংগ্রামের প্রয়োজনীয়তা বৃদ্ধি করবে যা রিপাবলিকান ও ডেমোক্র্যাটদের থেকে স্বাধীন থাকবে এবং তাদের বিরোধীতা করবে।
গণ সংগ্রাম আর "আলোচ্য বিষয়ের" মধ্যে নেই। সেগুলি এর মধ্যেই শুরু হয়েছে এবং তীব্রতর হচ্ছে। জন বিক্ষোভ ও শ্রমিক শ্রেণীর বিরোধীর বহু অভিব্যক্তি গত দু'বছরে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে এবং আন্তর্জাতিক ভাবে দেখা গেছে।
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে গত দু'বছর ধরে বেড়ে চলা শিক্ষকদের ধর্মঘটের ঢেউয়ের পর এই বছর ৪৮,০০০ জি-এম শ্রমিক এক মাস ধরে ধর্মঘট পালন করেছে, যা গত কয়েক দশকে মোটরগাড়ি শ্রমিকদের সবচেয়ে লম্বা ধর্মঘট। ট্রেড ইউনিয়নরা যখন এই জি-এম ধর্মঘট ভাঙতে গেছে, পেনসিলভেনিয়া, মেরিল্যান্ড ও ফ্লোরিডার ৩,৫০০ ম্যাক ট্রাক শ্রমিক এবং অ্যারিজোনা ও টেক্সাসের ২,০০০ খনি শ্রমিক নতুন করে ধর্মঘট শুরু করেছে। এই সপ্তাহে শিকাগোয় ২০০০-এর বেশী শিক্ষক ধর্মঘটে সামিল হতে পারেন।
এখানেই রয়েছে সেই সামাজিক শক্তি যা ট্রাম্পকে গদিচ্যূত করতে পারে এবং তার নেতৃত্বের প্রতিক্রিয়াশীল স্বরূপ প্রকাশ করে দিতে পারে। শ্রমিক ও ছাত্রদের এই ট্রাম্প প্রশাসনের বিরুদ্ধে গণবিক্ষোভ ও প্রতিবাদ সংগঠিত করতেই হবে। এই আন্দোলনের লক্ষ্য একটি রাজনৈতিক সাধারণ ধর্মঘট শুরু করা, যা রাজনৈতিক শক্তির প্রশ্ন তুলবে। এরকম একটি আন্দোলন সংগঠিত করতে গেলে ট্রেড ইউনিয়নরা শ্রমিকদের বিচ্ছিন্ন করার ও অবদমিত করার যে চেষ্টা করতে, তার বিরুদ্ধে সব শ্রেণীর শ্রমিকদের একত্রিত করতে জনপ্রিয় কর্মস্থান ও প্রতিবেশী কমিটির একটি সংযোগ সৃষ্টি করতে হবে।
ট্রাম্প প্রশাসনের বিরুদ্ধে যে লড়াই, তার সঙ্গে মিলিত করতে হবে সামাজিক অসাম্য, সামাজিক কর্মকান্ড ও পরিকাঠামো ধ্বংস, কাজ ও মজুরির ওপর আক্রমণ, তরুণদের পুরো প্রজন্ম যে ভয়াবহ অবস্থার সামনে, উদ্বাস্তু শ্রমিকদের ওপর ভয়ঙ্কর নির্যাতন, পরিবেশের অবনতি, এবং বিরামহীন ও বেড়ে চলা যুদ্ধের পরিণতি, যা সমগ্র মানবতাকে বিপদের মুখে ঠেলে দিচ্ছে - এই সকলের বিরুদ্ধে সংগ্রামের সঙ্গে যোগ করে নিতে হবে ট্রাম্প প্রশাসনের বিরুদ্ধে সংগ্রামকে। বিশ্ব জুড়ে যে শ্রমিকদের একই স্বার্থ ও অধিকার এবং যারা একই সমস্যার সম্মুখীন হয়, তাদের মধ্যে তৈরী হওয়া সামাজিক সংগ্রামের সঙ্গে মিলিয়ে নিতে হবে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে শ্রমিক ও যুবদের বিরোধীতাকে।
এই বস্তুগত আন্দোলনকে পথ দেখাতে এক সচেতন সমাজতান্ত্রিক কার্য্যক্রম ও দৃষ্টিভঙ্গীর প্রয়োজন। সোশ্যালিস্ট ইকুয়ালিটি পার্টি এবং তার যুব সংগঠন, ইন্টারন্যাশনাল ইয়ুথ অ্যান্ড স্টুডেন্টস্ ফর সোশ্যাল ইকুয়ালিটি এই লড়াইয়ের নেতৃত্ব দিচ্ছে। যারা সবাই এই দৃষ্টিভঙ্গীর সঙ্গে একমত, তাদের আমরা ডাকছি এস-ই-পি-তে ও সারা বিশ্বে তার সঙ্গী দল, চতুর্থ আন্তর্জাতিকের ইন্টারন্যাশনাল কমিটি-তে যোগ দেওয়ার জন্য ও এই দলকে গড়ে তোলার সিদ্ধান্ত নিতে।
সোশ্যালিস্ট ইকুয়ালিটি পার্টি-র রাজনৈতিক কমিটি
Follow the WSWS